ঢাকা, বাংলাদেশ রবিবার ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ আর্কাইভ
হোম  »  সম্পাদকীয়

বিদায় ২০২৩

ডেইলি সংকেত ডেস্ক : মহাকালের গর্ভে হারিয়ে যাবে আরো একটি বছর। বিদায় ২০২৩। আগামীকাল সকালে হবে নতুন বছরের প্রথম সুর্যোদয়। শুরু হবে নতুন পথচলা, খুলবে ইতিহাসের নতুন পাতা, লেখা হবে নতুন বছরের আলেখ্য। পেছনে পড়ে থাকবে আনন্দ-বেদনা, দুঃখ-কষ্ট, ঘটনা-দুর্ঘটনার স্মৃতি। ইতিহাস হয়ে থাকবে জাতীয় ও সামাজিক জীবনের সব ঘটনাবলি।
বিদায়ী ২০২৩ সাল নানা কারণে আমাদের জাতীয় জীবনে আলোচিত। বিশেষ করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে টালমাটাল সময় পার করা বছর এটি। বছরটি ছিল নির্বাচনকেন্দ্রিক আন্দোলন সংগ্রামের বছর। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার তারিখ নির্ধারিত রয়েছে নতুন বছরের ৭ জানুয়ারি। এই নির্বাচনকে ঘিরেই সৃষ্ট পুরনো বছরের রাজনৈতিক উত্তাপ গড়াচ্ছে নতুন বছরেও। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীসহ ৬০টি রাজনৈতিক দল এই নির্বাচন বর্জন করে জনগণকে ভোট বয়কটের আহ্বান জানিয়ে আসছে। তাদের দাবি ছিল নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজনের। কিন্তু সরকারি দল আওয়ামী লীগ সেই দাবি মানেনি। ফলে তারা আন্দোলন সংগ্রামেই রয়েছে।

বিদায়ী বছরের সবচেয়ে বড় আলোচিত ঘটনা ছিল ২৮ অক্টোবরের ঘটনা। বিরোধী দলগুলো তাদের দাবি আদায়ে ঢাকায় মহাসমাবেশের আয়োজক করেছিল রাজধানীর নয়াপল্টন ও শাপলা চত্বর এলাকায়। শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হওয়া সেই আন্দোলন গড়ায় ভয়াবহ সঙ্ঘাতে। ঘটে হতাহতের ঘটনাও। এই ঘটনাকে চলমান রাজনীতির গতি নির্ণায়ক ঘটনা হিসেবেও আখ্যায়িত করা যায়। এর জেরে সেই পুরনো হরতাল-অবরোধের কর্মসূচি ফিরে আসে রাজনীতিতে। ঘটে সহিংসতার ঘটনাও। যা এখনো চলমান আছে। নতুন বছরে নির্বাচন ও নির্বাচনপরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে তা কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছে না। জনমনে নানা জল্পনা-কল্পনা পাশাপাশি কাজ করছে শঙ্কাও।
অন্যদিকে অর্থনৈতিক মন্দার মারাত্মক প্রভাব পড়ে জাতীয় জীবনে। রিজার্ভ কমে আসা, ডলার সঙ্কটের প্রভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অর্থনৈতিক অঙ্গন অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়ার বছর ২০২৩। যার রেশ এখনো কাটেনি। দ্রব্যমূল্যের পাগলা ঘোড়ার দাপটে সাধারণ মানুষের নাভিশ^াস ওঠে এ বছর। নতুন বছরে দ্রব্যমূল্য নতুন আশার আলো দেখবে সেই আশাও করতে পারছে না সাধারণ মানুষ।

কারণ জাতীয় রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের উত্তাপ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও পৌঁছে যায় এ বছর। বিশেষ করে এই বছরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য ভিসানীতি ঘোষণা করে। বাংলাদেশের অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এই নীতি ঘোষণা করে। এ বছরের ২৪ মে যুক্তরাষ্ট্র এই ভিসানীতি ঘোষণা দেয়। নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে পারে- এমন তৎপরতার সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধেই এই ভিসানীতি আরোপের কথা জানায় যুক্তরাষ্ট্র। এখানেই শেষ নয়, এবারের নির্বাচন আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য না হলে বাংলাদেশের ওপর নানারকমের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে- এমন আশঙ্কা ঘুরে বেড়াচ্ছে সর্বমহলে। প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনাও নতুন বছরে দেশে দুর্ভিক্ষের মতো অবস্থ্ াতৈরি হওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করে বক্তব্য দেন বিদায়ী বছরে।
মার্কিন ভিসানীতির পাশাপাশি একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য বিদেশীদের কূটনৈতিক তৎপরতা ছিল এই বছর ছিল আলোচিত ঘটনা। বিশেষ করে বাংলাদেশে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ছিল কূটনৈতিক অঙ্গনের আলোচিত ব্যক্তিত্ব। তিনি নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণার আগে রাজনৈতিক সংলাপের জন্য সরকার ও বিরোধী দলের নেতাদের সাথে একাধিকবার বৈঠক করে আলোচনায় আসেন। বাংলাদেশে তার কূটনৈতিক তৎপরতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আলোচনায় আসে রাশিয়াও। বাংলাদেশের নির্বাচনে প্রতিবেশী দেশ ভারতের ভূমিকাও বছরজুড়ে আলোচনার বিষয় ছিল।

সব কিছু ছাপিয়ে নতুন বছরে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে যাচ্ছে। বিরোধীরা এই নির্বাচনকে একতরফা নির্বাচন আখ্যা দিয়ে ভোট না দিতে জনসংযোগ কর্মসূচি পালন করছে। এই নির্বাচনকে ঘিরে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ‘ড্যামি প্রার্থী’। এবার সরকারি দল নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখাতে যেসব কৌশল অবলম্বন করছে তার মধ্যে ‘ড্যামি প্রার্থী’এর ধারণাটি অন্যতম।

বছরের শেষের দিকে মজুরি নির্ধারণকে কেন্দ্র করে আন্দোলন সংগ্রাম দেখা দেয় গার্মেন্ট সেক্টরে। এই আন্দোলনেও হতাহতের ঘটনা ঘটে। সরকার ইতোমধ্যেই একটি সর্বনিম্ন মজুরি ঘোষণা করে গ্যাজেট প্রকাশ করেছে। গার্মেন্ট সেক্টরের মজুরি আন্দোলনের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলকেও নাড়া দেয়। যুক্তরাষ্ট্রসহ গার্মেন্ট সামগ্রী রফতানি হয়- এমন দেশগুলো গার্মেন্ট শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া পূরণের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে। গার্মেন্ট সেক্টর সংশ্লিষ্ট অনেকে এই সেক্টরও নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করে।

বিদায়ী বছরের ডেঙ্গুজ¦র মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া ছিল জাতীয় জীবনে আরেক বিপর্যয়কর ঘটনা। বিদায়ী বছরে ডেঙ্গু কেড়ে নেয় ১৭০০ এর বেশি মানুষের প্রাণ। ২০২০ সাল থেকে করোনা ভাইরাসের প্রাণহানির বিপর্যয় কেটে উঠতে না উঠতেই ডেঙ্গুর হানায় অনেকে নিজের স্বজনদের হারান। এক কথায় বলতে গেলে বিদায়ী ২০২৩ সাল কোনো দিক থেকেই জাতীয় জীবনের জন্য কোনোভাবে স্বস্তিকর ছিল না। নতুন বছরের সূচনায়ও স্বস্তির আলামত স্পষ্ট নয়। তারপরও সব শঙ্কা, সব সমস্যার অবসানে নতুন বছর জাতীয় জীবনের জন্য শাস্তি, স্বস্তি ও স্থিতিশীলতার বারতা বয়ে আনুক-এই কামনা সবার।