মো: ফখরুদ্দিন সরাইল প্রতিনিধি : ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার বেড়তলায় মো. জেহাদ উদ্দিন প্রয়াস জাতীয় কবি নজরুল বিদ্যানিকেতন-এর বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী ২০২৪ অনুষ্ঠিত হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ও বিদ্যানিকেতনের প্রতিষ্ঠাতা মোঃ জেহাদ উদ্দিন-এর সভাপতিত্বে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সরাইল-আশুগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য মোঃ মঈন উদ্দিন (মঈন)। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সামারীন দেওয়ান, হাসন রাজার প্রপৌত্র ও চেয়ারম্যান, হাসন রাজা ফাউন্ডেশন, হাসন রাজা মিউজিয়াম ট্রাস্ট, হাসন রাজা পরিষদ, মোহাম্মদ আরজু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি, বিটিভি ও দৈনিক ইত্তেফাক, মোঃ জহির উদ্দিন, সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ইংরেজি বিভাগ ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারী কলেজ, মাহবুবুর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সরাইল প্রেস ক্লাব, আলহাজ্ব মোঃ শফিকুর রহমান, স্বত্বাধিকারী, শফিক ব্রাদার্স প্রোঃ) লিঃ, আহমেদ হোসেন, অবসরপ্রাপ্ত আয়কর কর্মকর্তা, ইসহাক সুমন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রতিনিধি, এটিএন বাংলা প্রমুখ। পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত এবং জাতীয় সঙ্গীত ও জাতীয় রণ সঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠান আরম্ভ হয়। বিদ্যানিকেতনের শিক্ষার্থীরা ‘যেমন খুশি তেমন সাজ’, সঙ্গীত, নৃত্য ও কবিতা আবৃত্তি পরিবেশন করে। অনুষ্ঠানে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ও সীরাতুন্নবী (সা.) রচনা ও সাধারণ জ্ঞান প্রতযোগিতার বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বিদ্যানিকেতনের সামগ্রিক কর্মকান্ডের ভুয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন,
বিদ্যানিকেতনের প্রতিষ্ঠাতা মোঃ জেহাদ উদ্দিন কেবল একজন দায়িত্বশীল, দেশপ্রেমিক ও দক্ষ আমলাই নন, ছাত্রজীবনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। বেড়তলা গ্রাম থেকে তিনি এসএসসি পরীক্ষায় কুমিল্লা বোর্ডে প্রথম স্ট্যান্ড করেন এবং এইচএসসি পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ড থেকে দশম স্ট্যান্ড করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন শাস্ত্রে প্রথম বিভাগে সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জন করেন। তবে তিনি গ্রামকে সব সময় তার হৃদয়ে ধারণ করেন, তিনি গ্রামের জন্য কাজ করেন, গ্রামের পিছিয়ে পড়া ছেলে-মেয়েদের শিক্ষার জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন এই বিদ্যানিকেতনটি। প্রধান অতিথি জেহাদের আদর্শ অনুসরণ বড় মানুষ হওয়ার জন্য প্রত্যেক শিক্ষার্থীর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি নজরুল ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবার সংগ্রামে সবাইকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণের অনুরোধ জানান।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সামারীন দেওয়ান বলেন, মোঃ জেহাদ উদ্দিন দেশের প্রতিথযশা নজরুল গবেষক। হাসন রাজার জন্য নজরুলের ছিল আকৃত্রিম ভালোবাসা। হাসন রাজার টানে নজরুল কয়েকবার সিলেট গিয়েছেন। হাসন রাজার তৃতীয় ছেলে দেওয়ান একলিমুর রাজা চৌধুরীর সাথে ছিল নজরুলের বন্ধুত্ব। হাসন রাজার নাতি দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ ছিলেন নজরুলের একান্ত সহচর। হাসন রাজা ও নজরুলের অপার্থিব সম্পর্কের অপ্রতিরোধ্য টানে এবং নজরুল গবেষক মোঃ জেহাদ উদ্দিনের ভালোবাসায় তিনি এ বিদ্যানিকেতনে বারবার ছুটে আসেন উল্লেখ করে বলেন, হাসন রাজা ছিলেন একজন পরম শিক্ষানুরাগী মহান ব্যক্তিত্ব। সুনামগঞ্জে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন হাসন রাজা মিডল ইংলিশ স্কুল (বর্তমান নাম সুনামগঞ্জ সরকারী জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়) এবং নারী শিক্ষার জন্য প্রতিষ্ঠা করেন লবজান গার্লস হাইস্কুল। সামারীন দেওয়ান মোঃ জেহাদ উদ্দিন প্রয়াস জাতীয় কবি নজরুল বিদ্যানিকেতনের প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে বড় স্বপ্ন নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
মোহাম্মদ আরজু বলেন, জেহাদ ১৯৯১ সালে এসএসসি পরীক্ষায় যখন ফার্স্ট স্ট্যান্ড করে, তখন আমিসহ সকল সাংবাদিক নিউজ করেছিলাম। দৈনিক ইত্তেফাক জেহাদের সংবাদটি প্রথম পাতায় বড় হেডলাইনে প্রকাশ করেছিল। তিনি জেহাদের প্রতিষ্ঠিত এ বিদ্যানিকেতন থেকে শত শত জেহাদ বের হবে এ আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, গ্রামে এমন একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কল্পনাও করা যায় না। বেড়তলা গ্রামে শিক্ষার যে আলো প্রজ্জ্বলিত হয়েছে, তা দিনে দিনে আরও বিকশিত হবে মর্মে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্য অতিথিবৃন্দ তাদের বক্তব্যে বিদ্যানিকেতনের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের ভুয়সী প্রশংসা করেন।
সভাপতি তার বক্তব্যে প্রধান অতিথিসহ সকল অতিথি, শিক্ষক ও অভিভাবকের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং শিক্ষার্থীদেরকে সত্যিকারের মানুষ হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, পড়াশোনা, খেলাধূলা, সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড সব কিছুতে সমানভাবে ভালো করতে হবে। নজরুলের আদর্শ ধারণ করে মাথা উঁচু করে পথ চলবার দীক্ষা নেয়ার জন্য তিনি সকলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।