মুফতী মোহাম্মদ এনামুল হাসান : পূর্ণ এক মাস সিয়াম সাধনার পর শাওয়াল মাসের প্রথম তারিখে উম্মতে মুসলিমার জন্য খুশির দিন হিসেবে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র ঈদুল ফিতর দান করেছেন।
ঈদ শব্দের অর্থ বারবার ফিরে আসা। ঈদকে ঈদ এ কারণেই বলা হয় যে, প্রতি বৎসর শাওয়াল মাসে ঈদ বারবার ফিরে আসে। শরিয়তের পরিভাষায় ঈদকে আনন্দ, খুশি বা উৎসব হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এই দিনে বান্দাহর প্রতি আল্লাহর অফুরন্ত রহমত বর্ষিত হয়। এইদিন আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রতিদান দেওয়া হয়। প্রতি বৎসর খুশির বার্তা নিয়ে আসে পবিত্র ঈদুল ফিতর। ঈদুল ফিতরের দিন ঈদুল ফিতর এর দুরাকাত নামাজ আদায়ের মাধ্যমে ঈদ শুরু হয়।
হাদিস শরিফে এসেছে, ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করে ফেরার পথে ফেরেশতা রাস্তায় মোড় মোড় দাঁড়িয়ে রোজা পালনকারীকে এই বলে স্বাগতম জানাতে থাকে যে, হে মহান আল্লাহপাকের বান্দাহগণ! আপনাদেরকে ক্ষমা করে দেওয়া হলো, আপনাদের পাপ মোচন করা হলো।
ঈদের রাতের ফজিলত –
হজরত আবু উমামা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি দুই ঈদের রাতে ইখলাসের সঙ্গে সওয়াব ও প্রতিদানের আশায় আল্লাহ তায়ালার ইবাদতে লিপ্ত থাকিবে, কিয়ামতের কঠিন ও ভয়ানক দিনে তার অন্তর সজীব থাকিবে, অর্থাৎ সে শান্তি ও নিরাপত্তায় থাকিবে। ঈদের রাতে জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকা, দুরুদ পড়া, কুরআন তেলাওয়াত করা মুস্তাহাব।
ঈদের নামাজ-রমজান মাসে পূর্ণ এক মাস রোজা রাখার পর শাওয়াল মাসের প্রথম তারিখে সকালের দিকে দুই রাকাত ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়তে হয়। ঈদুল ফিতরের নামায ওয়াজিব। রাসূল (স.) কখনো এ নামাজ ত্যাগ করেননি।
ঈদের দিনের সুন্নাত সমূহ-
খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠা, গোসল করা, মিসওয়াক করা, সামর্থ্য অনুযায়ী নতুন পোশাক পরিধান করা, খুশবু (আতর) ব্যবহার করা, নামাজে যাওয়ার পূর্বে মিষ্টান্ন জাতীয় কিছু খাওয়া, নামাজের পূর্বে সদকাতুল ফিতর আদায় করা, ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া, এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসা, সকাল সকাল ঈদগাহে নামাজ পড়ার জন্য যাওয়া, আস্তে আস্তে তাকবিরে তাশরিক পড়া, শরিয়তের সীমারেখার মধ্য থেকে আনন্দ ও খুশি প্রকাশ করা।
যেভাবে ঈদ শুরু হয়-
রাসূল (স.) মক্কা হতে হিজরত করে মদিনায় যাওয়ার পর দেখলেন যে, মদিনাবাসীদের মধ্যে অধিকাংশ যারা পূর্বেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছে তারা দুইটি উৎসব পালন করছে। যে উৎসবে তারা খেলাধুলা, আনন্দ উল্লাস করত। রাসূল (স.) তাদেরকে বললেন তোমরা যে দুটি উৎসব পালন করছ তার কারণ কি? তারা বলল, আমরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পূর্বে এই উৎসব এমন ভাবেই পালন করতাম যা আজ আমরা পালন করছি। রাসূল (স.) তাদেরকে বললেন, আল্লাহ তায়ালা তোমাদের এই দুই উৎসবের পরিবর্তে আরও উত্তম দুইটি উৎসব দান করেছেন। ঈদুল ফিতর আর ঈদুল আজহা। এখন থেকে এই দুটি উৎসবই মুসলিম জাতির ধর্মীয় প্রধান উৎসব। (আবু দাউদ শরিফ)
প্রত্যেক জাতিরই নির্দিষ্ট উৎসব রয়েছে। সে উৎসবের মাধ্যমে সে জাতি তাদের সামর্থ্যানুযায়ী সুন্দর পোশাক পরিধান, উৎকৃষ্ট খাদ্যদ্রব্যসহ আরও বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে নিজেদের খুশি অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নেয়। ইসলাম ধর্মেও দুটি উৎসব রয়েছে একটি ঈদুল ফিতর আরেকটি ঈদুল আজহা। এই দুটি উৎসবই মুসলিম মিল্লাতের ধর্মীয় প্রধান উৎসব। ঈদুল ফিতর শুধু উৎসবই নয় বরং একটি ইবাদত। হাদিস শরিফে আছে, হজরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বলেন, রাসূল (স.) ঈদুল আজহা ও ঈদুল ফিতরের দিন ঘর থেকে বের হতেন। অতঃপর নামাজ পড়ে ঈদের আনন্দ শুরু করতেন (মুসলিম শরিফ)। সুতরাং এই হাদিসে দেখা যাচ্ছে প্রথমে নামাজ তারপর আনন্দ। প্রথমে ইবাদত তারপর উৎসব। প্রথমে আল্লাহ তায়ালার শুকুর আদায় তারপর শরিয়তের ভেতরে থেকে আনন্দ প্রকাশ।
পবিত্র ঈদুল ফিতরে ধনী-গরিবের মাঝে থাকে না কোনো বৈষম্য। ঈদের আনন্দে একাকার হয়ে যায় সকলে। কোলাকুলি করে শত্রুকে করে নেয় আপন। সকলের মাঝে জাগ্রত হয় জান্নাতি পরিবেশ। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে পবিত্র ঈদুল ফিতরের পরিপূর্ণ সওয়াব, বরকত দান করুন এবং আমরা যেন মাহে রমজান ও পবিত্র ঈদুল ফিতরের শিক্ষাকে নিজেদের জীবনের সকল ক্ষেত্রে কাজে লাগিয়ে সত্যিকারের মানুষ হতে পারি আল্লাহ তায়ালা আমাদের সে তৌফিক দান করুন।