মুফতী মোহাম্মদ এনামুল হাসান
আরবি বর্ষপঞ্জিকার প্রথম মাস মুহাররম। মহররম মাসের গুরুত্ব ও মর্যাদা সীমাহীন। এই মাসের ১০ তারিখকে ‘ আশুরা ‘ বলা হয়। ১০ ই মহররম ঘটনাবহুল এক ইতিহাসের নাম। হাদিস শরিফে বর্ণীত আছে যে, মহররম মাসের ১০ তারিখে পৃথিবী সৃষ্টি করা হয়েছে, আবার ১০ ই মুহররম ই পৃথিবী ধ্বংস করা হবে।
১০ই মহররমকে ঘিরে রয়েছে অসংখ্য ঘটনা। মানবজাতির আদি পিতা হজরত আদম (আঃ)কে সৃষ্টি করা হয়েছে। লওহে মাহফুজকে সৃষ্টি করা হয়েছে। নদনদী, পাহাড়-পর্বত,সাগর মহা সাগর, সৃষ্টি করা হয়েছে।
জিব্রাইল (আঃ) আল্লাহর রহমত নিয়ে আদম (আঃ) নিকট প্রথম উপস্থিত হয়েছিলেন। মুসা (আঃ) তূর পাহাড়ে আল্লাহতায়ালার সাথে কথোপকথন ও তাওরাত কিতাব লাভ করে ছিলেন।
ইব্রাহীম (আঃ)নমরুদের অগ্নিকান্ড থেকে নাজাত পেয়েছিলেন। আইয়ুব(আঃ)রোগ মুক্তি লাভ করেছিলেন। ইউনুস (আঃ)মাছের পেট থেকে উদ্ধার পেয়েছিলেন। ইয়াকুব (আঃ)পুত্র ইউসুফ (আঃ)কে ফিরে পেয়েছিলেন।
ঈসা (আঃ) মরিয়ম (আঃ)এর গর্ভে জন্ম লাভ করে ছিলেন। অত্যাচারী জালেম ফেরাউনের হাত থেকে বনী ইসরাইল নাজাত লাভ করেছিলেন।নূহ (আঃ)ঝড়তুফানের কবল থেকে মুক্তি লাভ করেছিলেন।
হজরত মোহাম্মদ (সাঃ) এর প্রিয় দৌহিত্র ইমাম হুসাইন (রাঃ) তার সঙ্গীসহ কারবালার প্রান্তরে শাহাদাত বরণ করেছিলেন।
কারবালার প্রান্তরে ইমাম হুসাইন (রাঃ) এর শাহাদাতের সংঘটিত ঘটনা ঘটেছিল ১০ ই মুহররম। যে ঘটনা ছিল আত্মত্যাগের অনন্য এক দৃষ্টান্ত। জালেমের সামনে মাথা নত না করার ইতিহাস। সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে নিজের জীবন অকাতরে বিলিয়ে দেওয়ার ইতিহাস।
অন্যায়ের প্রতিবাদ ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য আত্মত্যাগের এক অনুকরণীয়, অনু সরণীয় বেদনাবিধুর ইতিহাসের নাম ‘ আশুরা ‘ বা ১০ ই মহররম। আশুরার রোজা -হজরত আব্বাস (রাঃ)হতে বর্ণীত আছে যে, নবীকরিম (সাঃ) যখন মদিনায় আগমন করলেন, তখন দেখলেন ১০ ই মুহররম ইহুদীরা রোজা রাখে। নবীকরিম (সাঃ) তাদের জিজ্ঞেস করলেন, এটা কোনদিন যে তোমরা রোজা রাখো? ইহুদীরা বললো এটা এমনদিন যে, আল্লাহতায়ালা মুসা (আঃ) ও তার সম্প্রদায়কে মুক্তি দিয়েছিলেন ফেরাউনের অত্যাচার থেকে। তাই আল্লাহতায়ালার শুকরিয়া আদায়ার্থে আমরা রোজা রাখি।
তখন নবী করিম (সাঃ) বললেন, তোমাদের তুলনায় আমরা মুসা (আঃ) এর সাথে ঘনিষ্ঠ। আমরা তোমাদের থেকে এর হকদার বেশি। তারপর তিনি মুহররমের ১০ তারিখের সাথে মিলিয়ে আগে পরে আরও একটি রোজা মিলিয়ে অর্থাৎ দুটি রোজা রাখার জন্য উম্মতকে নির্দেশ করলেন।
আশুরাকে কেন্দ্র করে ভ্রান্ত আকিদাহ ও কুসংস্কার থেকে বিরত রেখে এই দিন টি পালন করতে হবে। কারণ ১০ ই মুহররমকে কেন্দ্র করে বর্তমানে এবাদতের নামে এমন কিছু করা হয় যা ইসলাম কখনো অনুমোদন করেনা।
আল্লাহতায়ালা আমাদের সকলকে মনগড়া এবাদত, বেদা’য়াত ও কুসংস্কার মুক্ত জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন।