দৈনিক সংকেত ডেস্কঃ
এই বয়সে আমাদের মধ্যে বাবা-মাকে হারিয়ে ফেলার একটা আতঙ্ক কাজ করতে থাকে। চোখের সামনে আমরা আমাদের বাবা-মাকে বৃদ্ধ হতে দেখি। সে এক তীব্র যন্ত্রণা।
একটা সময় বাবা-মা যতটা গর্ব করে বলে, আমার সন্তানটা অনেক বড় হয়ে গেছে, ঠিক ততটাই ভয় নিয়ে সন্তানরাও বলে, বাবা-মার বয়স হয়ে যাচ্ছে। এর চেয়ে কষ্টের বোধহয় আর কিছু হয় না।
বাবা-মা ঘুমিয়ে থাকলে অদ্ভুত ভাবে তাদের ঘরে গিয়ে বারবার দেখতে হয় মানুষগুলো ঠিক আছেন তো?
ঘুমের মধ্যে সুন্দর করে নিশ্বাস নিচ্ছে, দেখলে তখন যেন বুকের উপর থেকে পাথর নেমে যায়। ছোট বেলায় যারা শিখিয়েছিলেন, সকালে তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে সবুজ প্রকৃতির দিকে চোখ বুলালে, আমাদের চোখের জ্যোতি বাড়ে। সেই মানুষ গুলোকেই যখন পাওয়ার ওয়ালা চমশা পরতে দেখতে হয়, তখন বুকের মধ্যে অজান্তেই একটা মোচর দিয়ে ওঠে।
চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ, এই বয়সটা সত্যিই খুব বাজে। বাবা-মায়ের হাই প্রেসার, একটু একটু করে তাদের ঔষধের কৌটো ভারী হতে দেখা, রোজ খবরের কাগজ, কিংবা বই পড়ার জন্য চশমা খুঁজে বের করে দেয়া, এইগুলো আমাদের সন্তানদের ভীষণ পোড়ায়।
আমরা বড় হই, সাথে সাথে আমাদের বাবা-মায়েরা বৃদ্ধ হতে থাকেন। এই যে চোখের সামনে নিজের বাবা-মাকে একটু একটু করে বৃদ্ধ হতে দেখার যেই যন্ত্রণা, এটা বোধহয় এই বয়সের সন্তানগুলো ছাড়া আর কেউ অনুভব করতে পারবে না।
এরপর একটা সময় বাবার লাশ কাঁধে নিয়ে কবরস্হানে যাওয়াটা যে কতো কষ্টের, তা একমাত্র বাবা হারা সন্তানেরাই বুঝবে। তারপরও কিছু থেকে যায়। সে হলো মা। এবার বাবার বিয়োগে মা এর প্রতিদিন ডুকরে কেঁদে ওঠা আর আহাজারি দেখার মতো শক্তি আর সন্তানদের থাকেনা।
কিছুদিন পর মা এর চলে যাওয়াটা সন্তানদের নি:শেষ করে দেয় চীরদিনের জন্য। তখন আর পৃথিবীতে কিছুই অবশিষ্ঠ থাকেনা সন্তানদের। মায়ের লাশটা কবরে নেমে রেখে আসাটা যে কি ভয়ংকর নির্মম নিষ্ঠুর নিয়তি, তা মাকে যারা হারিয়েছে, শুধু সেই সন্তানরাই উপলব্ধি করতে পারবে।
জানেন তো! ৪০ থেকে ৫০ বছর, এই বয়সটা আসলেই বড়বেশি বিষাদময়। জিবনের সবচেয়ে কালো নির্মম এক বেদনাবিদূর অধ্যায়!
মহান আল্লহ্ রাব্বুল আলআমীন তার দয়ায় ও রহমতে পৃথিবীর সকল মরহুম মা ও বাবাকে জান্নাতুল ফেরদাউস নসীব করুন।
আমীন।