ঢাকা, বাংলাদেশ মঙ্গলবার ৯ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ আর্কাইভ
হোম  »  ইসলাম ও জীবন

ফজরের নামাজ আর হবে না কাজা

 মোঃ ফখরুদ্দিনঃ 

ইসলামের পাঁচটি মূল স্তম্ভের মধ্যে নামাজ অন্যতম। প্রতিদিনের পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে ফজর নামাজটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। ফজর নামাজ হলো ঈমানের পরীক্ষা ও মুমিনের সৌভাগ্য। প্রভাতের প্রথম নামাজ হওয়ায় এটি সূর্যোদয় পূর্ববর্তী সময়ের মধ্যে আদায় করতে হয়। এই নামাজের গুরুত্ব এবং করণীয় সম্পর্কে মুসল্লিদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি অত্যন্ত জরুরি। তবে অনেক সময় দেখা যায়, কিছু মুসল্লি মনে করেন, তারা ফজর নামাজের কাজা করবেন না বা করতে চান না। এই বিষয়টি মুসলিম সমাজে নানা ধরনের বিভ্রান্তি ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি করছে। আসুন, এই নিউজের মাধ্যমে ফজর নামাজের গুরুত্ব, করণীয়, ও সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো জেনে নেয়া যাক।
ভোরে সুবেহ সাদিকের মুহূর্ত থেকে সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত প্রায় দেড় ঘন্টা সময় ফজরের নামাজ আদায়ের নির্ধারিত ওয়াক্ত বা সময় কিন্তু নির্ধারিত। এ সময়ের মধ্যে ঘুম থেকে উঠতে আমাদের অনেকেরই কষ্ট হয়। ঘুম থেকে উঠতে না পারার কারণে আমরা অনেকে ফজরের নামাজ নির্ধারণ সময়ে আদায় করতে পারি না। প্রধানত আমাদের অলসতার কারণেই আমরা যথাসময়ে ফজরের নামাজ আদায় করতে পারি না। ফজরের নামাজ আদায়ের সহযোগিতার জন্য কয়েকটি সহায়ক পন্থা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
ফজর নামাজ কাজা হলে আদায়ের বিধান
১. এখলাস অর্জন: ফজর নামাজ আদায়ে সক্ষম হওয়ার জন্য প্রথম যে বিষয়টি দরকার তা হলো এখলাস অর্জন। আল্লাহ তাআলার জন্য নিজেকে একনিষ্ঠ করা। আল্লাহ তাআলার যথাযোগ্য মর্যাদা হৃদয়ে ধারণ করা।
২. দৃঢ় সংকল্প: ফজর আদায় করার জন্য দৃঢ় সংকল্প করতে হবে। কারণ প্রথমদিকে কাজটি অনেক কঠিন মনে হবে। দৃঢ় সংকল্পই পারে এটিকে সহজ করতে। ফজরের নামাজের জন্য আপনি যদি মন থেকে দৃঢ় ইচ্ছা করেন তবে কখনোই রাত জাগবেন না তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ুন যাতে করে একদিকে আপনার ঘুম ও পূর্ণ হয় আবার অন্যদিকে যথাসময়ে ফজরের জন্য উঠতে পারেন।  রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এশার নামাজের পরপরই ঘুমাতে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। বিজ্ঞানও এ অভ্যাসের যথার্থ প্রমাণ প্রকাশ করেছে।
৩. গুনাহ থেকে দূরে থাকা: নিজের কৃত অপরাধের জন্য তওবা করা ও পরবর্তীতে সকল গুনাহ থেকে দূরে থাকার ব্যাপারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে।
৪. কায়মনোবাক্যে দোয়া: ফজরের নামাজ আদায়ের তৌফিক কামনা করে আল্লাহ তাআলার কাছে কাকুতি-মিনতি করে দোয়া করতে হবে। ঐকান্তিক কামনা ও এখলাস থাকলে মহান রব নিশ্চয় সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করে দিবেন।
৫. সৎ সঙ্গ: সৎ-সঙ্গ ও সৎ লোকদের সাহচর্যে থাকলে আমলের প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়। অসৎ ও বেনামাজীর সাথে থাকলে আমলে শিথিলতা আসে।
৬. সঠিক পদ্ধতিতে ঘুম: যথাযথ নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে ঘুমাতে হবে। সুন্নাত পদ্ধতিতে ঘুমানের চর্চা করলে ঘুমের কারণে ফজর মিস হওয়ার সমস্যা দূর হবে। আগে আগে শুয়ে পড়া, অজু করে ও দোয়া পড়ে ঘুমাতে হবে।
মরে ভেসে ওঠা মাছ খাওয়া হালাল কি না
৭. ঘুমানোর আগে অধিক আহার নয়। রাতে চা-কফি পান করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
৮. ফজরের নামাজের ফজিলত সম্বলিত বিভিন্ন হাদিস ও বাণী কার্ডে লিখে রুমে সাঁটিয়ে রাখা।
৯. অ্যালার্ম ঘড়ি ব্যবহার।  আওয়াজ যত বেশি হবে ততই ভালো। এলার্ম ঘড়ি হাতের কাছে বা বিছানার পাশে না রেখে দূরে রাখুন যাতে করে আপনাকে বিছানা থেকে উঠে গিয়ে ঘড়ি বন্ধ করতে হয়। এতে ঘুম থেকে উঠার পাশাপাশি আপনার ঘুমের ভাব কাটার জন্য সহায়ক হবে। নামাজী প্রতিবেশিকে ডেকে দিতে বলা, সেক্ষেত্রে কলিং বেল এর ব্যবহার। কাউকে ফোনে কল দিয়ে জাগিয়ে দিতে বলা।
১০. অন্য কাউকে ফজর নামাজের জন্য দাওয়াত দেয়া। অন্যকে দাওয়াত দিলে নিজের গাফলতি দূর হবে।
১১. ঘুমাতে যাওয়ার আগে অযু করে নিন। যদি আপনি পবিত্র অবস্থায় ঘুমাতে যান তবে ফেরেশতারা আপনার ঘুম থেকে জাগার আগ পর্যন্ত আপনার জন্য দোয়া করতে থাকবে।
১২. ডান কাত হয়ে ঘুমাতে যান রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘুমাতে যাওয়ার সময় ডান কাত হয়ে ডান হাতকে ডান গালের নিচে রেখে ঘুমাতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুকরণে ঘুমের জন্য শোয়ার এই অবস্থা একদিকে যেমন ঘুমের জন্য সহায়ক অন্যদিকে ফজরের সময় যথাসময়ে ঘুম থেকে ওঠার জন্য কার্যকর।
১৩. ঘুমাতে যাওয়ার সময় কোরআন থেকে কিছু আয়াত তেলাওয়াত করে নিন বিশেষ করে সূরা সাজদা, সূরা মুলক, সূরা ইসরা, সূরা জুমার, সূরা কাহাফের শেষ চার আয়াত, সূরা বাকারার শেষ দুই আয়াত ইত্যাদি।
জুমার দিন যে পাঁচ কাজ ভুলেও করা যাবে না
১৪. আল্লাহর কাছে আন্তরিকতার সাথে বেশি দোয়া করুন যাতে আল্লাহ তাআলা আপনাকে যথাসময়ে ফজরের নামাজ আদায়ের সামর্থ্য ও শক্তি দান করেন। আল্লাহর কাছে যদি আপনি আন্তরিকভাবে প্রার্থনা করতে পারেন তবে আল্লাহও আপনার প্রার্থনাকে কবুল করবেন।
১৫.  নিজেকে পুরস্কার দান করুন যদি আপনি ফজরের সময় উঠতে পারেন তবে আপনার প্রিয় ফ্লেভারের কফি বা চকলেট দিয়ে নিজেকে পুরস্কৃত করুন।
ফজর নামাজের গুরুত্ব ও ইসলামী দৃষ্টিকোণ
ফজর নামাজ হলো ইসলামের পাঁচটি ভিত্তিপ্রস্তের অন্যতম। কুরআনে আল্লাহ বলেন, ‘নিশীথে ও সূর্যোদয়ের সময় নামাজ পড়ো।’ (সূরা আল-ইনশিরাহ: ৭)
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বহু হাদিসে ফজর নামাজের গুরুত্ব স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এক হাদিসে বলা হয়, ‘যে ব্যক্তি ফজর নামাজ পড়ে, সে যেন পুরো দিনটি আল্লাহর রহমত ও বরকত লাভ করে।’ (বোখারী ও মুসলিম)
এছাড়া, ফজর নামাজের মাধ্যমে মুসল্লিরা দৈনিক জীবনে আল্লাহর সাথে সংযোগ স্থাপন করেন এবং আল্লাহর রহমত লাভের সুযোগ পান। এটি মুসলিম জীবনে শান্তি, নিরাপত্তা ও বরকত বয়ে আনে। তাই ইসলাম ধর্মে এই নামাজকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।
ফজর নামাজের সময় ও করণীয়
ফজর নামাজ আদায়ের সময় সুর্য ওঠার আগে অর্থাৎ প্রভাতের প্রথম প্রহরে। এই সময়ের মধ্যে নামাজ আদায় করা ফরজ। সময়ের মধ্যে নামাজ না পড়ে থাকলে, তা কাজা করতে হয়। কাজা নামাজের জন্য তওবা ও অনুশোচনা করা উচিত এবং পরবর্তী সময়ের মধ্যে নিয়মিতভাবে নামাজ আদায় করা জরুরি।
মদের বোতলে পানি পান করা কি জায়েজ?
অতীতে অনেক মুসল্লি মনে করেন, তারা ফজর নামাজের কাজা করবেন না। তবে ইসলামের দৃষ্টিতে, যদি কেউ ভুলে বা অজান্তে নামাজ না পড়ে থাকেন, তবে তার জন্য কাজা ফরজ। যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ না পড়ে থাকেন, তাহলে তা গুরুতর অপরাধ। তাই, প্রত্যেক মুসল্লিকে উচিত, সময়মতো নামাজের গুরুত্ব বুঝে নিয়মিত নামাজ আদায় করা।
নামাজের গুরুত্ব ও অবহেলা: ক্ষতিকর ফলাফল
নামাজের অবহেলা বা নিয়মিত না পড়ার ফলে নানা ধরনের ক্ষতিকর ফলাফল দেখা দেয়। এর মধ্যে রয়েছে, আত্মিক ক্ষতি, সমাজে অবক্ষয়, অশান্তি, ও আল্লাহর অসন্তুষ্টি। বিশেষ করে, ফজর নামাজের ব্যাপারে উদাসীনতা অনেক সময় ধর্মীয় জীবনকে দুর্বল করে দেয়।
অতএব, প্রত্যেক মুসল্লির উচিত, আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী, সময়মতো ফজরসহ সব নামাজ আদায় করা। এতে শুধু নিজেকে আল্লাহর কাছাকাছি নেওয়া যায় না, বরং সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় থাকে।