মোঃ তৌহিদুল ইসলাম, পিতা মৃত হুরন আলী, তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার ভরাকুট ইউনিয়নের ভরাকুট গ্রামে ১৯৮৯ সালে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় তিনি ভলাকুট ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাহিত হন মোঃ তৌহিদুল ইসলাম।
উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর সভাপতি হন ওই ইউনিয়ন ছাত্রদলের। বর্তমানে ভলাকুট ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি এবং নাসিরনগর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে দলের জন্য ত্যাগ তিতীক্ষার কমতি নেই তার আওয়ামী লীগের সময় মামলাও খেয়েছেন।
এই তৌহিদুলকেই ঢাকার আদাবর থানার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আলী মিয়া নামে এক ব্যাক্তিকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে দেয়া মামলার আসামি করা হয়েছে। সেখানে তার পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে কৃষকলীগ নেতা হিসেবে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার কয়েকজন মন্ত্রীর সঙ্গে তৌহিদুলকে আসামি করা হয়েছে।
ওই মামলায় শুধু তৌহিদুল নয়। আদাবর ও মীরপুর মডেল থানার দুই মামলায় ফান্দাউক ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আলমগীর শাহের ছোট ভাই মালিক শাহ,মেরাজ শাহ,আওয়ার মেম্ভার,ফরহাদ মেম্ভারও ফান্দাউক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আতুকুড়া গ্রামের মোঃ ফরিদ মিয়া ছাড়াও নাসিরনগরের বিভিন্ন গ্রামের লোককে আসামী করা হয়েছে।
ঢাকার আদাবর শেখেরটেকের ৫ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা মো. তোহা খান (৩৯) চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গত ২০শে নভেম্বর মামলাটি করেন। সিআর মামলা নম্বর-১৩৩২/২৪(আদাবর), স্মারক নম্বর ৩১২৫, তারিখ: ২০/১১/২৪ইং মুলে গত ৩০শে নভেম্বর আদাবর থানায় এটি এফ আই আর হয়।
মামলায় ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। ২ নম্বর আসামি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, ৩ নম্বর আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ৪ নম্বর আসামি সাবেক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং ৫ নম্বর আসামি করা হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনের সাবেক এমপি ফরহাদ হোসেন সংগ্রামকে।
মামলায় ১২৭ জনকে এজাহারনামীয় এবং ১০০ থেকে ২০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। এর মধ্যে ৩৯ নম্বর আসামি নাসিরনগরের ভলাকুট গ্রামের চৌকিদার পাড়ার হুরন আলীর ছেলে মো. তৌহিদুল ইসলাম। এজাহারে দলীয় পরিচয়ে কৃষকলীগ নেতা উল্লেখ করা হয়েছে তাকে।
মামলার এজাহারে গত ১৯শে জুলাই আদাবর থানাধীন হাউসিং গেইটের সামনের পাকা রাস্তায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার মিছিলে হামলা এবং গুলি চালালে শেখেরটেকের আলী মিয়া (৪৬) নিহত হন বলে অভিযোগ করা হয়। তার পিতার নাম জাবেদ আলী।
মামলাটিতে তৌহিদুল ছাড়াও নাসিরনগরের চাতলপাড়ের আরও বেশ কয়েকজনকে এবং সরাইল ও নবীনগরের আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। মামলায় আসামি হওয়া যুবদল নেতা মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, যেখানে এ ঘটনা সেখানে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
ঢাকায় গেলেও আমার জীবনে আদাবর যাইনি। ঘটনার তারিখে আমি ভলাকুট গ্রামেই ছিলাম। আমার প্রতিপক্ষের লোকজন প্রতিহিংসা বশত এটি করেছে বলে ধারণা করছি। আওয়ামী লীগ কি জিনিস আমি জীবনে করিনি। ৮৯ সালে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় নিজ ইউনিয়নে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হয়েছি। ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পর হয়েছি সভাপতি। চাতলপাড়ের একজনের মাধ্যমে মামলার কপিটি পেয়ে মামলা হওয়ার কথা জানতে পারেন তিনি।
ভলাকুট ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি হাজী বরকত উল্লাহ বলেন, ষড়যন্ত্র করে এসব মিথ্যা মামলায় ঢোকানো হচ্ছে। আওয়ামী লীগের সময়ও তৌহিদুলের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে। এখনো দেয়া হচ্ছে। তার প্রশ্ন তাহলে আমরা বিএনপি করে আর কি করব।
নাসিরনগর উপজেলা বিএনপি সভাপতি আব্দুল হান্নান বলেন, এটা খুব দুঃখজনক। সে আমার সঙ্গে আন্দোলন সংগ্রামে ছিল। কোনো অদৃশ্য শক্তি এ কাজ করেছে। আমরা তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়ার জন্যে দল থেকে প্রত্যয়ন দেব। জেলা এবং কেন্দ্রকে বিষয়টি অবহিত করব। যারা ন্যক্কারজনক এ কাজে জড়িত তাদেরও বিচার দাবি করছি। মামলার বাদী মো. তোহা খানের নম্বরে ফোন করে পাওয়া যায়নি। নম্বরটি ফরোয়ার্ড করে রাখা হয়েছে।
ঢাকার আদাবর থানার অফিসার ইনচার্জ মাহফুজ ইমতিয়াজ ভূইয়া বলেন, মামলাটি কোর্ট থেকে এসেছে। আদালত আমাকে মামলা নিতে বলেছে। মামলায় বিএনপি ও জামায়াতের অনেককে এবং নিরীহ মানুষকে আসামি করা হয়েছে। বিষয়টি আমি জানি।বাদী হয়তো ঘটনা জানেও না। মামলার আইও’র সঙ্গে বাদীর কথা হয়েছে। তবে সে কথা বলতে চায় না। আসামিদের সম্পৃক্ততার বিষয়টি আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখছি। মামলার সঠিক তদন্ত করেই আদালতে সার্চসীট প্রদান করা হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।