ঢাকা, বাংলাদেশ শুক্রবার ২রা মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ আর্কাইভ
হোম  »  ব্রাহ্মণবাড়িয়া

কিশোরীর পেট থেকে বের হলো ১৫ কেজি ওজনের টিউমার

মোঃ সাইদুল মোস্তাক জুয়েলঃ মাত্র ১৪ বছরের কিশোরী ফাতেমা। এখনো জীবনের রঙিন স্বপ্নগুলো দেখতে শেখেনি সে। ছোট্ট বুকের ভেতর স্বপ্ন বুনছিল—ভবিষ্যতে বড় হয়ে অনেক কিছু করবে। কিন্তু সেই স্বপ্নে যেন আচমকা কালো মেঘ নেমে এসেছিল। তার কোমল শরীরে বাসা বেঁধেছিল একটি বিশাল আকৃতির টিউমার, যার ওজন ছিল অবিশ্বাস্য ১৫ কেজি!

বড়াইল ইউনিয়নের বড়াইল গ্রামের নজরুল ইসলামের মেয়ে ফাতেমা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কলেজপাড়ার একটি মহিলা মাদরাসার শিক্ষার্থী। হঠাৎ করে শরীরে অসহনীয় যন্ত্রণা আর অস্বস্তি অনুভব করলে গত এক সপ্তাহ আগে তাকে ভর্তি করা হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে।
রোববার (২৭ এপ্রিল) সকালে যেন এক অনির্বচনীয় উদ্বেগ, আশঙ্কা আর প্রার্থনার পরিবেশ। ফাতেমাকে অস্ত্রোপচারের টেবিলে তোলা হয়। অপারেশন থিয়েটারের ভেতর কঠিন এক যুদ্ধ। কিশোরীর জীবন বাঁচাতে একসঙ্গে কাজ করেন হাসপাতালের গাইনী কনসালটেন্ট ডা. শরিফ মাসুমা ইসমত, ডা. জাকিয়া সুলতানা রুনা, সার্জারী কনসালটেন্ট ডা. আজহারুর রহমান তুহিন, এবং এনেস্থিসিয়ান কনসালটেন্ট ডা. খোকন দেবনাথ ও ডা. সৈয়দ আরিফুল ইসলাম।
দীর্ঘ সময়ের শ্বাসরুদ্ধকর অস্ত্রোপচারের পর, অবশেষে জয় হলো জীবনের। সফলভাবে ফাতেমার পেট থেকে ১৫ কেজি ওজনের ভয়ঙ্কর টিউমারটি অপসারণ করা হয়।
হাসপাতালের করিডরে অপেক্ষমাণ পরিবার তখন আনন্দে আত্মহারা। চোখের কোনায় জমে থাকা অশ্রু যেন নতুন জীবনের আনন্দের বার্তা বহন করছিল। ফাতেমা এখন সুস্থতার পথে। তার সেই অপূর্ব হাসিটা আবার ফিরে এসেছে, যে হাসি হারিয়ে যেতে বসেছিল কঠিন এক মরণছায়ার নিচে।
এই সাহসী অভিযানের নীরব নায়ক চিকিৎসকরা প্রমাণ করেছেন—মানুষের হাতে আজও জীবন বাঁচানোর অমিত শক্তি রয়েছে। ফাতেমা বেঁচে গেছে, বেঁচে গেছে তার হাজারো স্বপ্নের সম্ভাবনা।
সফল অস্ত্রোপচারের পর অপারেশন থিয়েটার থেকে বেরিয়ে এসে গাইনী কনসালটেন্ট ডা. শরিফ মাসুমা ইসমত বলেন, “ফাতেমার পেটের টিউমারটি ছিল বিরল ও বিপজ্জনক। সময়মতো অস্ত্রোপচার না করলে তার প্রাণনাশের আশঙ্কা ছিল। অত্যন্ত সতর্কতার সাথে টিউমারটি অপসারণ করা হয়েছে। এখন সে সুস্থ রয়েছে।”
হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. শাহিনুর আলম বলেন, “আমাদের হাসপাতালের ইতিহাসে এটি একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য। ফাতেমার মতো রোগীদের বাঁচানো আমাদের মূল লক্ষ্য। আমাদের সার্জনরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে এবং সফল হয়েছে। এমন কঠিন অস্ত্রোপচারে টিমওয়ার্কই সবচেয়ে বড় শক্তি।”