দৈনিক সংকেত ডেস্কঃ হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার আউলিয়াবাদ রাম কেশব উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দ আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির সন্ধান পাওয়া গেছে। প্রধান শিক্ষক ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিদ্যালয়ের কারিগরি শাখার একটি আইপিএস, একটি ব্যাটারি, ২ কয়েল তার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি দীর্ঘদিন যাবত নিজের বাসায় ব্যবহার করে যাচ্ছেন। ২০২৫ সালের এসএসসি সাধারণ শাখা ও কারিগরি শাখার ফরম পূরণ বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নেন বোর্ডের নির্ধারিত ফি এর অতিরিক্ত জন প্রতি ৫০০ টাকা। এছাড়া ২০২১ সাল থেকে এসএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সনদ ও প্রত্যয়ন পত্র বাবদ গ্রহণ করেন জন প্রতি ৫০০ টাকা করে। কিন্তু বিদ্যালয়ের সাধারণ হিসাবে জমা না করে প্রধান শিক্ষক নিজেই আত্মসাৎ করেন। সাংবাদিকগণ পরিদর্শনকালে এই তথ্য প্রকাশ পায় যে এসব টাকা গ্রহণের বিপরীতে শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়নি কোন প্রাপ্তি রশিদ।
এই দুটি বিষয়ে বিদ্যালয়ের বর্তমান কমিটির সভাপতি জনাব মোঃ আমিনুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি এ বিষয়ে জানেননি বলে মন্তব্য করেন। এই বিষয়ে বিদ্যালয়ের কারিগরি শাখার ট্রেড ইন্সট্রাক্টর মোঃ হাবিবুর রহমানের কাছে এই আইপিএস এর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এই প্রতিবেদকের কাছে কারিগরি শাখার উল্লিখিত যন্ত্রপাতি প্রধান শিক্ষকের বাসায় ব্যবহারের বিষয়টি স্বীকার করেন। প্রধান শিক্ষক সৈয়দ আছাদুজ্জামানের কাছে বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ অডিট সম্পর্কে জানতে চাইলে দেখাতে পারেননি কোনো প্রমাণ। শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় বিগত ১২ বছর যাবত বিদ্যালয়ের কোন অভ্যন্তরীণ অডিট করা হয়নি।
শিক্ষা নীতিমালায় উল্লেখ থাকলেও বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য তিনি গঠন করেননি কোনো উপকমিটি , ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে এভাবেই কাটিয়ে দিচ্ছেন বছরের পর বছর। পরিদর্শনে আরো জানা যায় সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএড সনদ দিয়ে চাকরি করে যাচ্ছেন প্রধান শিক্ষকের। এভাবেই নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে, স্থানীয় প্রভাব খাটিয়ে প্রতিষ্ঠান চালিয়ে যাচ্ছেন নিজের মতো করে। অনুসন্ধানে আরও জানা যায় যে, এই সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে শিক্ষকরা প্রতিবাদ করিলে শিক্ষকদের বিভিন্নভাবে হয়রানি, হেনস্থা ও বেতন বৈষম্যের শিকার হতে হয়েছে। হেনস্তা, বেতন বৈষম্যের স্বীকার থেকে বাদ পড়েনি এনটিআরসিএ থেকে নিয়োগ পাওয়া ধর্মীয় শিক্ষক জান্নাতুন নাইমা ও।
সাংবাদিকদের পরিদর্শনে আরও একটি সত্য বেড়িয়ে আসে তিনি স্থানীয় দাপট দেখিয়ে উক্ত বিদ্যালয়ের কারিগরি শাখার ল্যাব সহকারি মোঃ নয়ন মিয়ার মাধ্যমে বিদ্যালয় চলাকালীন সময়ে চালিয়ে যাচ্ছেন প্রাইভেট বাণিজ্য। এই বিষয়টি মোঃ নয়ন মিয়াকে সাংবাদিকগণ জিজ্ঞেস করিলে তার সত্যতা তিনি নিজেই স্বীকার করেন। এই স্কুলের আরো অন্যান্য শিক্ষক মন্ডলীর সাথে এই বিষয়টি জানতে চাইলে অনেকেই এই প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টির সত্যতা প্রকাশ করেন। এই প্রতিবেদকের অনুসন্ধানের এক পর্যায়ে আরো জানা যায় যে, প্রধান শিক্ষক সৈয়দ আছাদুজ্জামান কিছু শিক্ষকদের প্রতিও স্বজন প্রীতির কম নেই।
স্বজন প্রীতি করে বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষিকা শম্পা দেব রায় কে প্রায় প্রতিদিন টিফিনের পর বিদ্যালয় থেকে ছুটি দিয়ে দেয়। যার কুফল ভোগ করতে হয় শিক্ষার্থী ছাত্র-ছাত্রীদের। আর এরেই ধারাবাহিকতায় এই বিদ্যাপীঠের শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়িতেছে দিন দিন। প্রধান শিক্ষকের এই স্বজন প্রীতির কারণে অভিভাবকরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলিতেছে তাই টিসি নিয়ে তাদের সন্তানদের ভর্তি করাচ্ছেন অন্য স্কুলে। এই ব্যাপারে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে প্রধান শিক্ষক সৈয়দ আছাদুজ্জামান বলেন আগের তুলনায় এই স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে। স্কুলের সকল অনিয়ম এবং অভিযোগের কথাটি মাধবপুর শিক্ষা অফিসার মোঃ সিরাজুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে জিজ্ঞেস করলে তিনি সাংবাদিকদের জানান যে এই বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না এবং অবগত নয়।
২০২৪ সালের ষষ্ঠ শ্রেণীর রেজিস্ট্রেশনের শিক্ষা বোর্ড নির্ধারিত ফি ছিল ৬৮ টাকা কিন্তু তিনি গ্রহণ করেছেন ১২০ টাকা। অষ্টম শ্রেণীর রেজিস্ট্রেশন বাবদ শিক্ষা বোর্ডে নির্ধারিত ফি ছিল ১২৫ টাকা, তিনি কৌশলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে গ্রহণ করেছেন ৩০০ টাকা। ২০২৪ সালের নবম শ্রেণীর জেনারেল শাখায় শিক্ষা বোর্ডের নির্ধারিত ফি ছিল ২১১ টাকা শিক্ষার্থীদের ফাঁকি দিয়ে তিনি গ্রহণ করেছেন ৩৫০ টাকা। ২০২৪ সালের ভোকেশনাল নবম শ্রেণীর বার্ষিক সমাপনী পরীক্ষার শিক্ষা বোর্ড ফি নির্ধারিত ছিল ১৯০৫ টাকা, তিনি কৌশলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করে নেন ২৬০০ টাকা। এখানে উল্লেখ যে, সংযোগ রক্ষাকারী ফি এবং বিলম্ব ফি অত্র প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না হওয়া সত্ত্বেও তিনি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতারণা করে হাতিয়ে নেই অতিরিক্ত ৬০০ টাকা করে। যাহা শিক্ষা নীতিমালা ২০২১ সালের পরিপন্থী। এমনিভাবে তিনি এসএসসি ভোকেশনাল ২০২৫ সালের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সংযোগ রক্ষাকারী ফি ও বিলম্ব ফি বাবদ অতিরিক্ত ৬০০ টাকা করে হাতিয়ে নেন। এ সকল প্রতারণা করেছেন কিন্তু তিনি শিক্ষার্থীদের দেননি কোন প্রাপ্তি রশিদ যাহা শিক্ষা নীতিমালার ২০২১ সালের সীমা লংগনের শামিল পরিণত হয়েছে।
এসব অনিয়মের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক সৈয়দ আসাদুজ্জামানের কাছে জানতে চাইলে অতিরক্ত ফি নেওয়ার বিষয় স্বীকার করেন এবং আইপিএস নিউজ লেখা অবস্থায় স্কুলে ফেরত দিয়ে দেন বলে সংবাদ পাওয়া যায়।