ঢাকা, বাংলাদেশ মঙ্গলবার ৯ই সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ আর্কাইভ
হোম  »  শিক্ষাঙ্গন

মো: হুমায়ূন কবির: ৩৭ বছর গণিতের আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন, অবসরে

মোহাম্মদ আবু সুফীঃ

৩৭ বছরের শিক্ষার আলো বিলিয়ে বর্তমানে তিনি শুধু একজন শিক্ষক নন, বরং শিক্ষার্থীদের কাছে একজন অভিভাবক, পথপ্রদর্শক ও অনুপ্রেরণার প্রতীক।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বিটঘর গ্রামে ১৯৬৫ সালের ১০ সেপ্টেম্বর জন্ম নেন মো: হুমায়ূন কবির। শৈশব থেকে পড়াশোনার প্রতি তাঁর আগ্রহ তাঁকে নিয়ে যায় শিক্ষার উচ্চতর পথে, আর পরে সেই শিক্ষার আলো তিনি বিলিয়েছেন অসংখ্য শিক্ষার্থীর মাঝে। দীর্ঘ সাড়ে তিন দশকের শিক্ষকতা জীবনে তিনি হয়ে উঠেছেন এক প্রেরণার নাম।
সাদামাটা জীবনযাপন ও সরলতা তাঁকে আলাদা মাত্রা দিয়েছে। সাধারণ পোশাক-পরিচ্ছদ, নিয়মিত জীবনধারা এবং নিঃস্বার্থ মনোভাবের কারণে তিনি শুধু সহকর্মীদের কাছেই নয়, শিক্ষার্থীদের কাছেও বিশেষ সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অহংকার থেকে দূরে থেকে সবসময় মিশেছেন সাধারণ মানুষের সঙ্গে। বিদ্যালয়ে কিংবা গ্রামের পথে— সবখানেই তিনি ছিলেন সহজ-সরল ও আন্তরিক।
তাঁর এই সরলতা ও আত্মনিবেদিত মনোভাব শিক্ষার্থীদের মাঝে একধরনের মানবিক শিক্ষা ছড়িয়ে দিয়েছে, যা বইয়ের বাইরের বড় এক পাঠ হয়ে থাকবে চিরকাল।
শিক্ষাজীবনের পথচলা,হুমায়ূন কবিরের প্রাথমিক শিক্ষা শুরু হয় বিটঘর উত্তর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এরপর ১৯৮১ সালে তিনি বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পাস করেন বিটঘর রাধানাথ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। ১৯৮৪ সালে শ্রীকাইল কলেজ থেকে এইচএসসি শেষ করে একই কলেজ থেকে ১৯৮৭ সালে গণিতে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। শুধু একাডেমিক শিক্ষাতেই সীমাবদ্ধ থাকেননি, ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএড ডিগ্রি লাভ করে তিনি পেশাদার শিক্ষার দীক্ষা নেন।
শিক্ষকতা জীবনের শুরু ও বিস্তার,শিক্ষকতার মাধ্যমে সমাজে অবদান রাখার স্বপ্ন নিয়ে তিনি ১৯৮৮ সালের ১ ডিসেম্বর শিক্ষকতা জীবন শুরু করেন কসবা বাদৈরের সাবের সাদত পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানে তিনি দুই বছরেরও বেশি সময় কাটিয়ে ১৯৯১ সালে যোগ দেন রাইতলা লাল মিয়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ে। এখানেও তিনি দুই বছরের বেশি সময় ধরে নিষ্ঠার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলেন।
তবে তাঁর জীবনের বড় অধ্যায় শুরু হয় ১৯৯৩ সালের এপ্রিলে, যখন তিনি নিজ গ্রামের গর্ব বিটঘর রাধানাথ উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগ দেন। সেই থেকে দীর্ঘ ৩২ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করছেন। বর্তমানে তিনি শুধু একজন শিক্ষক নন, বরং শিক্ষার্থীদের কাছে একজন অভিভাবক, পথপ্রদর্শক ও অনুপ্রেরণার প্রতীক।
পেশাগত জীবনে অনন্য অর্জন,সব মিলিয়ে মো: হুমায়ূন কবিরের শিক্ষকতা জীবনের পরিধি ৩৬ বছর ৯ মাস ৯ দিন। এ দীর্ঘ সময়ে তিনি অসংখ্য শিক্ষার্থীর জীবন গড়তে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। গণিতকে সহজ ও আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করার ক্ষমতা তাঁকে আলাদা করে চিনিয়ে দিয়েছেন।
শিক্ষকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত,গ্রামীণ প্রেক্ষাপটে বেড়ে ওঠা এক ছেলেশিশু কীভাবে নিজের মেধা, শ্রম আর নিষ্ঠা দিয়ে শিক্ষার আলো ছড়ানোর মহৎ যাত্রায় অগ্রসর হয়েছেন—মো: হুমায়ূন কবির তারই উজ্জ্বল উদাহরণ। তাঁর এই পথচলা কেবল তাঁর শিক্ষার্থীদের নয়, সমাজকেও অনুপ্রাণিত করে চলেছে প্রতিনিয়ত।